আকাঙ্ক্ষিত বডি শেপ অর্জনের জন্য এক্সপার্টের পরামর্শ!

আকাঙ্ক্ষিত বডি শেপ অর্জনের জন্য এক্সপার্টের পরামর্শ!

 আকাঙ্ক্ষিত বডি শেপ অর্জনের জন্য এক্সপার্টের পরামর্শ অনুসরণ করুন!



নিজেকে আকর্ষণীয় করতে আমরা কত কিছুই না করি! প্রচুর টাকা খরচ করে মেকআপ কিনি, তবে মেকআপ মুছে ফেললেই আমাদের প্রকৃত চেহারা ফিরে আসে। সচেতন যারা, তারা ব্যায়ামের মাধ্যমে বডি শেইপ আনার চেষ্টা করেন, কিন্তু মাঝে মাঝে ফলাফল সন্তোষজনক হয় না। আপনি কি ভেবেছেন কেন আপনার কাঙ্ক্ষিত বডি শেপ পাচ্ছেন না? আজকের এই আর্টিকেলে ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট মাহমুদা আক্তার রোজী আলোচনা করবেন আকাঙ্ক্ষিত বডি শেপ পেতে করণীয় কিছু বিষয় নিয়ে।

বডি শেইপের ধরন

মানুষের দেহের গঠন একেবারেই ভিন্ন। কেউ মুখভরাট, কেউ শুকনো, আবার কেউ বা পুরো দেহ ভারী। এই ভিন্নতা আমাদের শারীরিক কাঠামো থেকে আসে। আমাদের বডি শেপ অনুযায়ী ডায়েট এবং এক্সারসাইজ রুটিন তৈরি করা অনেক সহজ।

ফ্যাটের উপর ভিত্তি করে সাধারণত ৬ ধরনের বডি শেইপ দেখা যায়:

  1. দেহের উপরের অংশ ভারী:
    যারা ব্যায়ামে অনীহা দেখান এবং মিষ্টিজাতীয় খাবারের প্রতি আসক্ত, তাদের মধ্যে এই ধরনের শেইপ বেশি দেখা যায়। এই পরিস্থিতিতে, খাদ্যতালিকা থেকে মিষ্টি বাদ দিতে হবে এবং প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। অ্যারোবিক এক্সারসাইজ, হাঁটা অথবা সাঁতারকাটা ভালো ফলাফল দেয়।

  2. দেহের মধ্যভাগ ভারী:
    নারীদের মধ্যে এই ধরনের বডি শেপ সাধারণত দেখা যায়। অধিকাংশ সময় দেখা যায়, তারা নিজের সুস্থতার প্রতি মনোযোগী নন। মানসিক চাপ, অস্থিরতা, এবং ডিপ্রেশন এ সমস্যার কারণ। দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে, স্ট্রেস ফ্রি হয়ে রিলাক্সড জীবনযাপন করলে এবং নিয়মিত ৩০-৪০ মিনিট যোগ ব্যায়াম, অ্যারোবিক্স বা মেডিটেশন করলে এ সমস্যা অনেকটাই কমে আসে।

  3. পেটের নিচের অংশ ভারী:
    অনেকের দেহের উপরের অংশের চেয়ে থাই বা ঊরু মোটা থাকে। এর মূল কারণ অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা। যারা এমন সমস্যায় ভুগছেন, তাদের খাবারের তালিকায় কম চর্বিযুক্ত মাংস, তাজা মাছ, শাক-সবজি ও ফল রাখতে হবে। সকালে সঠিক পরিমাণে নাস্তা না করার অভ্যাস এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এতে অন্য সময়ে বেশি খাবার খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।

  4. পাকস্থলীতে চর্বি:
    মদ্যপানের আসক্তি অথবা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে যারা ভোগেন, তাদের পাকস্থলীতে চর্বি জমতে পারে। এর জন্য মদ্যপানকে না বলা এবং সঠিক চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।

  5. শরীরের নিম্নাংশ (পা) ভারী:
    গর্ভাবস্থায় নারীদের সাধারণত এই ধরনের বডি শেপে দেখা যায়। এ সময় তারা পা ও গোড়ালির ব্যথায় ভোগেন। অতিরিক্ত ওজন বহন এবং সুষম খাবার না খাওয়ার কারণে এমনটি হয়ে থাকে। প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে এবং খাবার তালিকায় লবণ জাতীয় খাবার পরিহার করে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।

  6. চিবুক, গলা ও কাঁধ ভারী:
    শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে এই অংশগুলোতে চর্বি জমে মোটা হয়ে যায়। গ্লুকোজ জাতীয় খাবার (মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার) না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবেও দেহে খাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। এজন্য সুস্থ দেহ এবং পারফেক্ট বডি শেপের জন্য দৈনিক আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।

খাদ্য তালিকা ও এক্সারসাইজ

পারফেক্ট বডি শেপের জন্য খাদ্য তালিকা:
বডি শেইপ ঠিক করার জন্য প্রথমেই দেহের গঠন অনুযায়ী খাবার তালিকা সাজাতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, দুধ অবশ্যই রাখতে হবে। প্রোটিন শরীরের শক্তি যোগায় এবং চলাফেরায় সাহায্য করে।

শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার:
আঁশযুক্ত খাবারও নিয়মিত খেতে হবে। এগুলো ওজন কমাতে সাহায্য করে। খাবারের তালিকায় কিছু স্বাস্থ্যকর চর্বিও রাখতে হবে, যেমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। সব চর্বি খারাপ নয়; এ ধরনের চর্বি মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

এক্সারসাইজের নিয়মাবলী

  1. ওয়ার্ম আপ:
    এক্সারসাইজ শুরু করার আগে ৫-১০ মিনিট ওয়ার্ম আপ করুন। এটি মাংসপেশিতে টান লেগে ইনজুরি হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।

  2. ভিন্ন ভিন্ন এক্সারসাইজ:
    প্রতিদিন একই এক্সারসাইজ না করে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের জন্য আলাদা ব্যায়াম করুন। যেমন: একদিন পেটের জন্য, পরের দিন পায়ের জন্য এক্সারসাইজ করুন।

  3. স্ট্রেচিং:
    ব্যায়াম শেষে স্ট্রেচিং করতে ভুলবেন না। এটি শরীরের নমনীয়তা বাড়ায় এবং পেশীর ক্লান্তি কমায়।

  4. বিশ্রাম:
    সপ্তাহে ১-২ দিন বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। এর ফলে শরীর পুনরুদ্ধার হতে সাহায্য পায়।

  5. পানি পান করা:
    প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। পানি শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখতে এবং মেটাবলিজম উন্নত করতে সাহায্য করে।

উপসংহার

আমরা সবাই তারুণ্য ধরে রাখতে চাই এবং পছন্দের পোশাক পরে দেখতে চাই। এজন্য আমাদের বডি শেপ জানা জরুরি। আপনার দেহের গঠন অনুযায়ী উপযুক্ত ডায়েট চার্ট ও এক্সারসাইজ পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং সেটি অনুসরণ করুন। সুস্থ থাকুন, আনন্দে বাঁচুন!

Post a Comment

0 Comments